ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চলতি জানুয়ারি মাসে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৬ জন রোগীর বয়স ৭০ বছরের বেশি। এরপর ৫০ থেকে ৬০ বছরের বেশি বয়সী রোগী ছিলেন ২০ জনের মতো। মৃত ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ ছাড়াও গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার বাসিন্দা।গত চার-পাঁচ দিনে মৃত্যুহার বেড়েছে। মৃতদের মধ্যে শহরের রোগী যেমন আছেন, তেমনি আছেন গ্রামের রোগী।

২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (৬৫) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১৭ জানুয়ারি তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁকে করোনার একটি ভ্যাকসিন দেওয়া ছিল। ময়মনসিংহ শহরের কাচিঝুলি এলাকার বাসিন্দা তিনি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত করোনা ইউনিটে প্রতিদিন রোগী মারা যাওয়ার সংখ্যা ছিল গড়ে এক-দুজন। এরপর সংখ্যাটা বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয় ২৫ জানুয়ারি। এদিন করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এরপর ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি আবার পাঁচজন করে রোগীর মৃত্যু হয়। গত ১০ দিনে দৈনিক গড়ে তিন-চারজন করে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

মৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যকের বয়স ৭০ বছরের ওপরে। ২৮ জানুয়ারি মৃত ফজিলা খাতুন ও আবুল হোসেনের বয়স ছিল ৮৫ বছর করে। ২৫ জানুয়ারি মৃত ত্রিশালের সবেদ আলী ও ময়মনসিংহ সদরের দুলাল উদ্দিনের বয়স ছিল ৮০ বছর। ২৬ তারিখে মৃত গাজীপুরের মনোয়ারা ছিলেন ৯০ বছর বয়সী। ২২ তারিখে মৃত জামালপুরের মনির হোসেনের বয়স ছিল ৭৯ বছর। ২০ জানুয়ারি মৃত জামালপুরের দুলাল উদ্দিনের বয়স ছিল ৮০ বছর। ১৮ তারিখে মৃত ময়মনসিংহের হারেছ আলীর বয়স ছিল ৯০ বছর। ১৬ তারিখ মৃত ভালুকার লালমোহনের বয়স ছিল ৭০ বছর। ১৩ তারিখে মৃত টাঙ্গাইলের ফিরোজার বয়স ছিল ৭০ বছর। ১২ জানুয়ারি মৃত ময়মনসিংহের আবুল কালামের বয়স ছিল ৭০ বছর। ১১ তারিখে মৃত ময়মনসিংহ সদরের জয়গুনের ৮০ ও অরুণা পালের ৯০ বছর বয়স ছিল। ১০ তারিখে মৃত ময়মনসিংহের ধীরেন্দ্রর ৭৫ বছর, ৬ তারিখ মৃত ময়মনসিংহের আমেনা খাতুনের ৭০ বছর এবং ২ তারিখে মৃত জামালপুরের হনুফার বয়স ছিল ৮০ বছর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, করোনাকাল থেকেই রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে মমেক হাসপাতাল। রোগীদের চিকিৎসার্থে নতুন ভবনের বেশির ভাগ তলা নিয়ে চালু হয় করোনা ইউনিট। স্থাপন করা হয় আইসিইউ শয্যা। বর্তমানে ৩৮০টি সাধারণ শয্যা এবং ২২টি আইসিইউ শয্যা এখানে প্রস্তুত রয়েছে। প্রায় ৩০ জনের মতো চিকিৎসক ধারাবাহিকভাবে এখানে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, গাজীপুর, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার রোগীরাও এখানে আসছেন করোনার চিকিৎসা নিতে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসা পাওয়ার সুবিধার জন্যই এ হাসপাতালে রোগীদের এমন ভিড়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ৭০ জন রোগী ভর্তি আছে। আইসিইউতে আছে চারজন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বিগত সময়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এখন রোগীদের আরো ভালো চিকিৎসাসেবা দিতে পারছে। হাসপাতালের উপপরিচালক ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজী বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কারণ রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

কলমকথা/রোজ